বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেছেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য ভোট আয়োজন করা দরকার। একটি অবাধ, স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে বলে আশা করছে যুক্তরাজ্য।

যেটা ভোট শেষে সব রাজনৈতিক দল মেনে নেবে। এজন্য প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল ও অন্যান্য দলের মধ্যে আলোচনা জরুরি।

তিনি বলেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে চারটি দিক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হচ্ছে-সব দলের মধ্যে উন্মুক্ত ও অবাধ আলাপ-আলোচনা ও অংশগ্রহণমূলক সংলাপ, ভোটের প্রকৃত কাস্টিং, স্বচ্ছতা এবং নির্বাচনের ফলাফল সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা।

সোমবার সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ-সিজিএস ও জার্মানিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্রেডরিক এবার্ট স্টিফটিংয়ের (এফইএস) আয়োজনে মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত জানান সিজিএসের চেয়ারম্যান ড. মনজুর এ চৌধুরী। আরও বক্তৃতা করেন ফ্রেডরিখ-এবার্ট-স্টিফটাংয়ের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সাধন কুমার দাশ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক সাংবাদিক জিল্লুর রহমান।

হাইকমিশনার বলেন, নির্বাচিত কারা হবে অবশ্যই তা দেশের জনগণ ঠিক করবে। ভোট আয়োজন, গণনা ও ফলাফল প্রকাশে স্বচ্ছতা থাকা উচিত। পরবর্তী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জোরালো সমর্থক। নির্বাচন কমিশন বলেছে যে, তারা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক স্বাগত জানাবে। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বন্ধুরা আছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের ব্যাপারে আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়তামূলক কাজ আমরা করতে পারি।

এ সময় তিনি বলেন, যে কোনো অভিযোগমুক্ত থাকুক বাংলাদেশ। মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সব সময়ই সজাগ থাকতে চায় যুক্তরাজ্য। তাই এ সংক্রান্ত উত্থাপিত অভিযোগগুলো আবারও খতিয়ে দেখবে বলে আশা করা যায়।

এই কূটনীতিক বলেন, বাংলাদেশের স্বাভাবিকভাবে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য গুণগত মানসম্পন্ন আরও প্রতিষ্ঠান দরকার এবং প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতাও বাড়াতে হবে। আর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়াতে ব্রিটিশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে তাদের শিক্ষা ব্যবসা বাড়াতে আগ্রহী। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন হাইকমিশনার।

তিনি বাংলাদেশের অতীত ৫০ বছর একসঙ্গে কাজ করার দৃষ্টান্ত টেনে বলেন, পরবর্তী ৫০ বছরও যুক্তরাজ্য একইভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায়।
তিনি বলেন, আগামী ৩ সেপ্টেম্বর অন্তত ২ লাখ কনজারভেটিভ সদস্য যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাদের নেতা নির্বাচন করবেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী যেই হোন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আগের মতোই শক্তিশালী থাকবে।

রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কে হাইকমিশনার বলেন, এ ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাজ্যের যে সহায়তা ছিল তা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, এটা ঠিক যে, আমরা দেখেছি রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের সঙ্গে নিরাপত্তাগত সমস্যা আছে। যেখানে অনেক তরুণ জনগোষ্ঠী আছে। তাদের মিয়ানমারের ভাষায় শিক্ষাদান, মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবাসন এবং এক্ষেত্রে বয়স্করা ক্যাম্পের ভেতরে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে পারেন। নিরাপত্তাগত সমস্যা দূর করার লক্ষ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কঠিন জীবন দূর করার ক্ষেত্রে কাজ করা যেতে পারে।

এজন্য সরকারের সঙ্গে অর্থায়ন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছি আমরা। তবে এটা ঠিক যে, আফগানিস্তান, ইয়েমেন এবং রাশিয়ার ইউক্রেনে অবৈধ আগ্রাসনের কারণে ইউরোপে ব্যাপক শরণার্থী সংকট তৈরি করেছে। সুতরাং এজন্য তহবিল বণ্টনে একটি প্রতিযোগিতা আছে। তাই রোহিঙ্গা খাতে আমরা অর্থায়ন অব্যাহত রাখব, যদিও তহবিল আগের চেয়ে কমতে পারে। অবশ্য আমরা মনে করি, জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিল রোহিঙ্গা ইস্যু ভুলবে না।

উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বিষয়ে হাইকমিশনারের কাছে জানতে চান।